পর পর দু'দুটো ঘটনা প্রমান করে যে দেশ আমাদের কোন দিকে চলছে। কার্টুনিস্ট আরিফের পুরোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে যশোরের বিচারক রায় দিয়েছেন তাঁকে আরো দু'মাসের জেলে যেতে হবে, যা নিয়ে আমাদের আরেক আরিফ জেবতিক ভাই লিখেছেন । আর সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি দুর্নীতি মামালায় সাজা প্রাপ্ত জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহাদাব আকবর এর সকল দন্ড ও অর্থ জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছেন। খবরটি পাবেন এখানে। কিন্তু রাষ্ট্রের পতি, আরিফের প্রতি এই উদারতা দেখাতে সাহস পান না। সত্যি কি বিচিত্র এই দেশ।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন তাঁর সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু তিনি নিজেও জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নন। এই ক্ষেত্রে আমি একজন প্রজাতন্ত্রের নাগরিক হিসেবে জানতে চাই ঠিক কোন কারণে তিনি এই সাজা মওকুফ করেছেন। এভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অপব্যবহার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ বলেই মনে করি। তাতে দেশে দুর্নীতিকে আরো প্রশ্রয় দেওয়া হল। এতে এটি প্রমানিত হল যে আইন শুধু আমাদের মত সাধারণ জনগণের জন্য, ক্ষমতাধরদের জন্য নয়।
আমাদের দেশের অনেক সমস্য। দেশের অধিকাংশ মানুষ অর্ধ-শিক্ষিত। দেশের জনসংখ্যা অত্যাধিক, সম্পদ সে তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু সব চেয়ে বড় সমস্যা আমাদের এই দুর্নীতি। দুর্নীতি আমাদের আজ ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। শুধু মাত্র যদি আমরা এই দুর্নীতিকে রোধ করতে পারি, প্রতিরোধ করতে পারি তবে আমরা আবার মাথা তুলে দাড়াতে পারবো। আজ পর্যন্ত আমরা একজন দুর্নীতিবাজকেও শাস্তি দিতে পারিনি। আদালত যে দু'একটিকে সাজা দেয় রাষ্ট্র তাকে ভিনদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে আর নয়তো এভাবে শাস্তি মওকুফ করে দেয়।
এই ক্ষেত্রে আরো একটি ব্যাপার চলে আসে। আমার মতে আমাদের রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়া উচিৎ। প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ আইন প্রণয়ন করুক, কিন্তু রাষ্ট্রের পিতা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হলে সংসদের জবাবদিহিতা নিশ্চিৎ করা যায়। গণতন্ত্র নিয়ে আমার আগের লেখায় আমি বলেছিলাম যে শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতার ভারসাম্য অনস্বীকার্য। তাই সংসদ, বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রপতি, দুর্নীতি দমন কমিশন এদের মঝে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। একটি শক্তিশালী দুর্নীতি দমন ও স্বাধীন বিচার বিভাগ ছাড়া আমাদের শক্তিশালী গণতন্ত্র সম্ভব নয়।
বর্তমান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বড় সমস্যা হল, জনগণের শুধু ভোটাধিকার আছে। শাসন ব্যবস্থা বা আইন প্রণয়নে সরাসরি অংশগ্রহনের কোন সুযোগ নেই। তাই যখন আইন প্রণয়নকারি নিজেই দুর্নীতি করেন তখন আমাদের হাত বাধা থাকে। বর্তমান পদ্ধতিতে যদিও আমরা ভিন্ন ভিন্ন লোককে ক্ষমতায় নিয়ে আসি, কিন্তু আড়ালে একটি শক্তিশালী গ্রুপ বিদ্যমান যারা মূলত নীতি নির্ধারণে ভুমিকা রাখে। দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদ এরা সকলে মিলে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। শুধু মাত্র তাঁদের অনাগ্রহের কারণেই তাঁরা বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেয় না। প্রতি পাঁচ বছর পর পর আমরা একবার খালেদা, একবার হাসিনা, এদেরকেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফিরে আনতে বাধ্য হই, আর দিন বদলের স্বপ্ন দেখি।
এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত। আমাদের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার হওয়া উচিত। এই দুর্নীতিবাজদের জনগণের সামনে তাঁদের রূপকে উম্মোচন করা উচিত, যেমনটি আমরা সোচ্চার যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে। আমরা অতীত পাপীদের যেমন বিচার করবো, এই নতুন পাপীদেরও তেমনি বিচার চাই। আমরা তরুন সমাজই পারি এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। আসুন আমরা শুরু করি এই আন্দোলন। আমরা একটি কাগুজে বাঘ দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিচার বিভাগ চাই না। সত্যিকার অর্থে একটি শক্তিশালী স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ এখন সময়ের দাবী। এই দাবীর প্রতি সকলে সোচ্চার হই, দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধ করি।
Friday, November 13, 2009
Subscribe to:
Posts (Atom)