Wednesday, December 16, 2009

স্বাধীনতা দিবসের আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী জানাই

দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষলে কি হয় তা মনে হয় আমরা এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি। আমাদের লজ্জা যে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো করিইনি উল্টো তাঁদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। যে কারণে আজ তাঁরা বলতে সাহস করে যে স্বাধীনতায় তাঁদেরও অবদান আছে। আমরা জাতি হিসেবে কতটা খারাপ হয়ে যাচ্ছি সেটা আর কষ্ট করিয়ে আমাকে দেখিয়ে দিতে হচ্ছে না। যে জাতিতে যুদ্ধাপরাধীরা, দুর্নীতিবাজরা গলা উচিয়ে চলে আর সৎ মানুষেরা হয় সমাজে অচল, সে জাতি কিভাবে পৃথিবীতে টিকে থাকবে আমি জানি না। এখনো সময় আছে, আমাদের জাতিকে গড়ে তোলবার। যার জন্য এই প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে, কাজ করতে হবে। ভুলে যেতে হবে আমাদের আগের প্রজন্মের ব্যার্থতার কথা। তাঁরা পারেননি, হয়তো তাঁদের সীমাবদ্ধতা ছিল। তাঁরা হয়তো স্বাধীনতা এনে দিয়েই তাঁদের দায়িত্ব শেষ মনে করেছে।

আজকে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল, মিডিয়া সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতির ফলে আমরা যেটা সুবিধে পাচ্ছি তা হল সমমনাদের একত্রে পাওয়া- যা অতীত কালে এভাবে সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারতো না। আজ পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত হতে যে কেউ যে কোন প্রকল্প হাতে নিতে পারে এবং তার জন্য সকলে মিলে কাজ করতে পারি। যে কারণে দেশ হতে বাহিরে এসেও কেউই ভাবে না সে দেশের বাহিরে রয়েছে। আমি যেখানেই থাকি না কেন প্রিয় জন্মভূমির জন্য টান কখনো মলিন হবার নয়।

এই মুহুর্তে আমাদের যেটা করা দরকার ব্লগে ব্লগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিপুল জনমত তৈরী করা। আমি জানি জনমত তৈরী আছেই, কিন্তু সেটাই এখন আওয়াজ দিয়ে সরকারের কর্ণকুহরে পৌছানো। সরকার যেন কোনভাবেই না ভাবে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিডিয়ার হত্যা মামলা বা ২১ শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা বা ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ। আর আওয়ামী লীগ যেন কোনভাবেই এই বিচারেকে তাঁদের আগামী নির্বাচনের ইস্তিহারের বিষয় ভেবে না রাখে। সরকারের বিভিন্ন কথাবার্তায় সে রকমই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা যত দেরী করবো তত এই যুদ্ধাপরাধীরা মানুষকে আরো বেশি বিভ্রান্ত করবে।

সরকারকে এই মুহুর্তে একটি ডেড লাইন দিয়ে দেওয়া জরুরী। এই ক্ষেত্রে আমি বলবো আমরা আগামী স্বাধীনতা দিবসের আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর্ব শুরু হয়েছে দেখতে চাই। এ জন্য আমরা সবাই প্রচারনা চালিয়ে যাই। ব্যানার হোক, পোস্টার হোক, শ্লোগান হোক, কবিতা হোক, গান হোক, ছবি হোক, গল্প হোক, লেখা হোক, মানব বন্ধন হোক। কিন্তু আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর্ব শুরু না হয়া পর্যন্ত আমাদের মুখ বন্ধ রাখবো না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন তাঁদের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিসিবি যুদ্ধাপরাধীদের জন্য আলাদা আর্কাইভ খুলেছে। সচলেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি/লেখা নিয়ে আলাদা আর্কাইভ এর চিন্তা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া WCSF (War Crime Strategy Forum) গঠন হয়েছে যেখানে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে গড়ে উঠছে যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কিত মিডিয়া আর্কাইভ এবং ই-লাইব্রেরী। মিডিয়া আর্কাইভে গত এক বছরের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে প্রকাশিত সকল পত্রিকার খবর ও ব্লগে প্রকাশিত লেখা, বিভিন্ন ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে। ই-লাইব্রেরীতে বাংলা ও ইংরেজীতে প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কিত বই, জার্নাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো সকলের ব্যবহারে জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে একেক জন যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে আলাদা আলাদা তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং সেখান থেকে তাঁদের কুকীর্তিগুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করা হবে যা পরবর্তীতে উইকি এবং অন্যান্য সকল জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এই তথ্য ভাণ্ডার যেন বিচারের সময় ব্যবহৃত হয় সেটার জন্যও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হবে। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আরো তথ্য পাওয়া যাবে জেনোসাইড আর্কাইভ, মুক্তধারা, নিউ-ইয়র্ক বাংলার ওয়েবসাইটে। এই তথ্যগুলো সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হোক।

আমাদের প্রজন্মের আক্ষেপ থাকতে পারে যে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমাদের এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে মুক্তির জন্য সে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায় নি। এখনো রাজাকার, দুর্নীতিবাজরা লাল সবুজের পতাকার গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায়। তাই নিজেকে প্রশ্ন করি যে যার অবস্থানে থেকে কি করতে পারি দেশের জন্য। সবাইকে যে এর জন্য রাজনীতি করতে হবে তাও নয়। প্রথমতঃ নিজে যদি সচেতন হই, মুক্ত চিন্তার মানুষ হই তখনই দেশ গড়ার কাজে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারপর নিজের অবস্থান, নিজের ক্ষমতা বুঝে যে কোন একটি ক্ষেত্রে অবদান রাখা। এই মুহুর্তে সবচেয়ে উপযোগী ক্ষেত্র হচ্ছে বাংলা উইকিকে সমৃদ্ধ করা। আমার মতে আমাদের দেশের মত অনুন্নত দেশগুলোর জন্য উইকি একটি বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে। একটি শক্তিশালী নুতন প্রজন্ম গঠনের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। মানুষ যে সব শিক্ষা শুধু বিদ্যালয়েই পায় তা নয়। তাঁর পরিবার, বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী, মিডিয়া সকল ক্ষেত্রে থেকেই সে জ্ঞান লাভ করে। আর সেই জ্ঞানের জন্যই প্রয়োজন একটি তথ্য ভাণ্ডার। চিন্তা করে দেখুন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভবপর নয় সকল স্কুলে বা সকল গ্রামে একটি করে লাইব্রেরী দেওয়া। কিন্তু আমাদের পক্ষে সম্ভব সকল জায়গায় একটি করে কম্পিউটারর ও ইন্টারেন্ট দেওয়া। স্বল্প খরচে সকলের কাছে আমরা জ্ঞানের দড়জা খুলে দিতে পারি যদি আমদের সেই জ্ঞানের ভান্ডার থাকে। উইকিকে আমি সেই জ্ঞানের ভান্ডার হিসেবেই দেখি। সকলের প্রচেষ্টায় আমরা এই ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারি। বাংলার ইতিহাস, পৃথিবীর ইতিহাস, সমাজ, বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি কোন বিষয় নেই যা আপনি আজ উইকির মাধ্যমে জানতে না পারছেন।

আমি জানি রাগিব সব সময় এই কথাগুলো বলার চেষ্টা করছে। আমিও আজ থেকে তাঁর সাথে এই কথাগুলো বলে যাবো। আমরা ফেইসবুকে বা ব্লগে যে পরিমান সময় ব্যয় করি তার থেকে কিছু সময় দিতে পারি উইকিকে, অন্তত পক্ষে বাংলা উইকিকে। উইকিতে লিখা আর ব্লগে লেখার মাঝে তেমন বিশেষ পার্থক্য নেই। তারপরেও রাগিবের টিউটোরিয়াল দেখে নিলে তেমন কোন সমস্যাই হবে না। আরকেটি কথাঃ অনেকেই ভাবি যে উইকিতে লিখতে হলে হয়তো অনেক কিছু জানতে হয়। সেটা ঠিক নয়। আপনি যা জানেন সেটাই লিখুন। কোন বইয়ে কিছু পড়েছেন, এবং যদি আপনার মনে হয় সেই তথ্যটি মানুষ জানলে উপকৃত হবে তবে তা দিয়ে দিন। শুধু বইয়ের সুত্রটি দিয়ে দিবেন। অথবা ইংরেজী উইকি থেকে কিছু পড়েছেন এবং যদি মনে করেন আপনি চান মানুষ সেটা জানুক তবে সেটাকে অনুবাদ করে নিজের ভাষায় কিছু লিখে দিন। ব্লগে যদি এত কিছু লিখতে পারেন তবে অবশ্যই সেখানেও দু'এক লাইন লিখতে পারবেন। আসুন গা ঝাড়া দিয়ে উঠুন, কিছু কাজ করুন। শুধু বিচারের দাবী জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে হবে না। আর কখনো যেন বিচারের জন্য অপেক্ষা না করতে হয় সেটার জন্যও কাজ করতে হবে। এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেন সমাজে আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা হয়। কেউই যেন নিজেকে আইনের উর্ধ্বে মনে না করে। দুর্নীতিবাজ, যুদ্ধাপরাধীদের স্থান যেন হয় শুধু চার দেওয়ালের ভেতরে।