Friday, September 24, 2010

এলোমেলো চিন্তাঃ অবিশ্বাসের যত গল্প

জবানবন্দী শব্দটি আমার মোটেও পছন্দ নয়। শব্দটি শুনলে নিজেকে মনে হয় একজন আসামী তার জবানবন্দী দিচ্ছে। অবিশ্বাসের জন্য নিজেকে সেরকম আসামী ভাবতে পারি না। পছন্দ হোক বা না হোক, জবানবন্দী হোক বা অবিশ্বাসের গল্পই হোক, সেটা বলার জন্যই আজ কলম ধরেছি। আমাদের সকলের অবিশ্বাসের গল্প বেশ কাছাকাছি। আবার জীবনের গল্পও কম বেশি কাছাকাছি। একই গল্প শুনতে সব সময় ভাল লাগে না, তারপরেও লিখে রাখছি নিজের চিন্তাগুলো, যদি কেউ তাতে অনুপ্রাণিত হয়।

ছোটবেলার গল্প বেশি নেই আমার, তেমন আহামরি/চমকপ্রদ কোন কিছুই নেই। আর নেই বলেই কিনা, তেমন কিছু মনেও নেই। আর দশটা সাধারণ শিশুর মত জন্ম নিয়েছিলাম সাধারণ মুসলিম পরিবারে। বাবা/মা দু’জনেই প্রচন্ড ধার্মিক মানুষ। বাবা প্রায় প্রতিটি নামাজ চেষ্টা করতেন মসজিদে যেয়ে পড়তেন আর মাও প্রতি বেলাতেই নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এমন পরিবারে স্বাভাবিক ভাবেই বাসায় সপ্তাহে তিন দিন হুজুর আসতেন আরবী পড়াতে। বেশ বয়ষ্ক একজন হুজুর আমাদের পড়াতেন। হুজুর যতদিন বেঁচে ছিলেন আমাদের বাসায় নিয়মিত আসতেন।

ছোটবেলা হতেই গণিত, বিজ্ঞান খুব টানতো আর ঘৃনা করতাম ইংরেজী/বাংলা ব্যাকারণকে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সব সময় খুব ভাল লাগতো। সপ্তম বা অষ্টম শ্রেনীতে আমার একটি প্রিয় বিষয় ছিল পৃথিবী যে গোল সেটার প্রমানের বিষয়গুলো। এখনো ভুলতে পারি না, সেই মাস্তুলের ছবিগুলো, যেখানে জাহাজ ধীরে ধীরে ফুটে উঠে যত তীরের কাছাকাছি আসে। আরেকটি প্রিয় বিষয় ছিল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে সেই বিষয়টী। এগুলো এখনো চোঁখের সামনেই ভাসে। যে জিনিস বুঝতে পারতাম তা কখনো ভুলতাম না, আর যে জিনিস বুঝতে পারতাম না তা হাজার বার পড়েও মনে রাখতে পারতাম না। পরবর্তীতে যখন বুয়েটে পড়তে আসি এই বুঝার ব্যাপারগুলো খুব ভাল কাজে দিয়েছে। তবে আমি সবচেয়ে ভাল বুঝতাম যখন কাউকে বুঝাতে যেতাম। দেখা যেত বন্ধুদের কোন বিষয় বুঝাতে গিয়েই সবচেয়ে বেশি নিজে বুঝেছি এবং নিজেও উপকৃত হয়েছি। তাই সে কাজটিই করতাম। একা একা পড়ার অভ্যেস করতে পারিনি।

কলেজে থাকাকালিন সময়ে বই পড়ার আগ্রহ ছিল বেশ। তখন শরৎচন্দ্রের উপন্যাসগুলো বেশি টানতো। কলেজে আমাদের বেশ ভাল একটি লাইব্রেরী ছিল। প্রায় সব ধরণের বইই পড়তাম। এর মাঝে একটি বই পড়ি ডেল কার্নেগীর “দুঃশ্চিন্তাহীন জীবন”। বইটির প্রায় প্রতিটি কথা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। নিজেকে সকল চিন্তা হতে দুঃশ্চিন্তা মুক্ত রাখার জন্য এই বইটির কাছে আমি ভীষণভাবে ঋনী। এর মাঝে একটি পন্থা ছিল সব সময় সবচেয়ে খারাপ কি হতে পারে চিন্তা করা। যে কোন বিপদে যদি সবচেয়ে খারাপটি কল্পনা করেন এবং যদি দেখেন যে তত খারাপ আসলে হচ্ছে না তখন দুঃশ্চিন্তা অনেক কমে যায়। কারণ অধিকাংশ সময়ে সবচেয়ে খারাপটি কিন্ত হবে না, প্রব্যাবিলিটি কিন্তু তাহাই বলে। এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক সমস্যাই মোকাবেলা করেছি, কিন্তু মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ হইনি, তার পেছনে ডেল কার্নেগীর এই বইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। এর ফলে আরেকটি যেটি লাভ হয়েছে যে কোন কিছুতে ধারাবাহিক যুক্তির ব্যবহার করার অভ্যেস হয়েছে।

অন্যান্য যে কোন কিশোরের মত প্রচুর সেবার বই পড়তাম। সেবার অনুবাদ, তিন গোয়েন্দা, ওয়েস্টার্ন সবই মুগ্ধের মত পড়তাম। জীবনে সবচেয়ে বেশি বই পড়েছি ইন্টারমিডিয়ট পরীক্ষার পর। কোথায় ভর্তি হবো এই নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। কোচিং এ যেতাম আর আসার সময় সিনেমা হলে ঢুঁ মেরে আসতাম। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটিয়েছি তখন। এর মাঝে বুয়েটে সুযোগ পেয়ে যাই কিন্তু ক্লাস শুরু হয় দেড় বছর পর। এই সময়টা টিউশনি করে আর বই পড়েই কাটাই। ততদিনে তিন গোয়েন্দা ছেড়ে ফেলুদা আর শার্লক হোমস গিলছি। শার্লক হোমসের অমনিবাস কিনে একের পর এক পড়ে যাচ্ছি। গোয়েন্দা কাহিনীই আমাকে বেশি টানতো। তবে সমরেশ, সুনীল, বুদ্ধদেব, শঙ্কর, শীর্ষেন্দু, আরো কত যে ওপারবাংলার লেখকের বই পড়েছি সব মনে করতে পারছি না। আশ্চর্যজনক ভাবে বুয়েটে ক্লাস শুরুর পর বই পড়া বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখন বছরে এক বা দু’টোর বেশি বই পড়িনি। যা পড়ার সব বুয়েটের ক্লাস শুরুর আগেই পড়েছি।

বুয়েটের জীবনটা বেশ চমৎকার কেটেছে। সারাদিন ক্লাস করতাম, বিকেলে ফটুবল খেলতাম, রাতে কার্ড খেলতাম। ক্লাস টেস্টের আগের দিন কিছুটা পড়তাম, বিকেলের সেশানাল ক্লাসের আগের এক ঘন্টায় কারোর ল্যাবের খাতা হতে চোথা মারতাম। প্রিপারেশন লিভের সময় রাতদিন পড়ে সারা টার্মের ফাঁকি পোষাতাম। এরকম সহজ সমীকরণের মাঝেই বুয়েট জীবন পার করে দিলাম। চোখের পলকে যেন পাঁচটি বছর চলে গেল। তারপর মাষ্টার্স করি পরবর্তী তিন বছরে। এই সময়টি আমি মুলত আর দশটা মুসলিমের মতই ছিলাম। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে মুসলমানিত্ব বজায় রাখতাম, আর রোজার মাসে উপোস করতাম এবং ঈদের নামাজে যেতাম। বাড়ী গেলে বাবার পীড়াপিড়তে মাঝে মাঝে ফজরের নামাজেও বাবার সাথে শামিল হতাম। একটি বিষয়ে আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে বাবা/মা সব সময় আমাকে নামাজের জন্য বলতেন, এখনো বলেন। কিন্তু কট্টর মৌলবাদীদের মত আমাকে বাধ্য করার জন্য চাপ দিতেন না।

বুয়েটের জীবনটা খুব উপভোগ করেছি। আড্ডা, সিনেমা দেখা, কার্ড খেলা, ফুটবল খেলা, ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা করা, এই ছিল মূলত জীবন। আমার চারজন রুমমেটের মাঝে দু’জন ছিল হিন্দু রুমমেট। এর মাঝে একজন হচ্ছে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। তাঁদের বাসায় যেয়ে থেকেছি, মাসীর হাতের কবুতরের মাংসের তরকারীর কথা জীবনে ভুলবার নয়। বরাবরই আমি ধর্মের এই বিভেদকে উপেক্ষা করে চলে এসেছি। ধর্মের কারণে বিধর্মীকে ভিন্ন জাত হিসেবে কল্পনা করা এক প্রকার অসম্ভব ছিল আমার কাছে। সেভাবে ধর্ম নিয়ে চিন্তা না করলেও প্র্যাক্টেসিং ভাবে মনে হয় সংশয়বাদের কাছাকাছি ছিলাম। বরং যারা বিধর্মীদেরকে ভিন্ন ভাবে নিতেন তাঁদেরকেই অমানুষ মনে করতাম।

বুয়েট জীবন শেষে চলে আসি বিদেশে উচ্চ-শিক্ষার্থে। বিদেশ জীবনের শুরুর সময়টা বিশেষ সুবিধের ছিল না। ঠান্ডার দেশে আসার পর আমার আর্থ্রাইটিস ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে আর্থ্রাটাইসের কারণে নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে, আমার ঘাড়ের মাছে মেরুদন্ডের একটি হাঁড় ক্ষয় হয়ে জয়েন্টটি খুলে যায়। সার্জারী করে সেই জয়েন্টটিকে ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। খুব বেশি জটিল সার্জারী না হলেও সার্জারীটি রিস্কি ছিল। আর বিদেশে বসে একা একা সার্জারীর ধকল সামলানো সব মিলিয়ে একটি কঠিন অবস্থার মাঝ দিয়ে অতিক্রম করি। ডেল কার্নেগীকে আবারো উপলব্ধি করি। জীবনকে নুতন ভাবে চিন্তা করার সুযোগ পাই। এক প্রকার নুতন এক জীবন হিসেবে নেই এটিকে। জীবনের উদ্দেশ্য কি নিজের মাঝে আবার প্রশ্নটি মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠে। মূলত এই প্রশ্নের খুঁজেই আমার অবিশ্বাসের জীবন শুরু করা।

এর মাঝে ব্লগ নামক বস্তুটির দেখা পাই মাত্র এক বছর আগে। লেখালেখির প্রতি টান ছিল সব সময়, কিন্তু লেখালেখি করার জন্য যে পরিমান জ্ঞান প্রয়োজন তা কখনোই ছিল না। এর মাঝে আমার গ্র্যাজুয়েট কোর্স ওয়ার্ক শেষ, শুধু গবেষণার কাজ করি। গবেষণার কাজ মূলত কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং ভিক্তিক হওয়াতে বাড়তি সময় সব সময় থাকতো, এই মুহুর্তে অফিসে বসেই লিখছি। আমার ব্লগের নব্বইভাগ অফিসেই বসে লেখা। নিজের বই পড়াশুনার আগ্রহ আবার শুরু হয়। প্রথমে মূলত ব্লগ পড়তাম। নানান ব্লগ দেখে সচলায়তন ব্লগটিকে পছন্দ হলো পরিবেশের জন্য। মুক্তমনা ব্লগও দেখতাম। কিন্তু অনেকদিন পড়ে মনে হল সচলে না লিখলে কোন সদস্য পদ দেওয়া হবে না, তাই একটি লেখা লিখেও ফেললাম। সেই শুরু। রাজনৈতিক দর্শনেই মূলত আগ্রহ আমার। এই আগ্রহ কিভাবে এসেছে বলা মুশকিল। প্রকৃতিগত ভাবেই আমি এই চরিত্রের অধিকারী বলে মনে হয়। মূলত মানুষের জন্য কিছু করার প্রেরণা থেকেই মনে হয় রাজনৈতিক দর্শনে আগ্রহ। কারণ আমার মতে একমাত্র রাজনৈতিক শক্তিই পারে মানুষের বৈপ্লবিক পরিবর্তন করতে।

এই রাজনৈতিক দর্শনটি খুঁজতে গিয়ে নানান পথে চলতে হয়েছে। কখনো ইতিহাসের পাতায় ঘুরতে হয়েছে, কখনো বিজ্ঞানের পাতায় ঘুরতে হয়েছে। ছোটবেলায় গোয়েন্দাকাহিনী যেমন টানতো এখন আমাকে ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শনের গল্প সেভাবে টানে। শুরুটা করি ইতিহাস দিয়েই। বই পড়ার নেশা দীর্ঘবিরতীর পর যেন বাঁধ ভেঙ্গে এসেছে। সেই সাথে কিছু লেখার প্রেরণা তো আছেই। নিজের গবেষণা করতে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর কিভাবে ধারাবাহিক ভাবে খুঁজতে হয় সেটাও শিখেছি। সব মিলিয়ে প্রায় ধারাবাহিক ভাবে নিজের নানান প্রশ্নের জবাব খুঁজতে থাকলাম। ধর্ম নিয়ে প্রথম একটি উপলব্ধি ছিল কিভাবে ধর্মের উৎপত্তি হয়। সে নিয়ে লেখাটি ছিল ধর্ম সমাজ ও দর্শন। একদম আদিম সমাজে ধর্ম কেমন ছিল কল্পনা করার চেষ্টা করি। যদি শুধুমাত্র মানব সভ্যতার ইতিহাসের দিকেই তাকাই দেখতে পাই যে ধর্ম এসেছিল আগে নাকি মানুষ এসেছিল আগে। অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম অনেক অনেক অনেক পরে এসেছিল। অবাক করা ব্যাপার হলো যে পুরোপুরি কৃষিকাজ শিখেছে মানুষ এই মাত্র প্রায় আট হাজার বছর আগে। প্রথম লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে মাত্র প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। এখন যদি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর দিকে দেখি তবে দেখনে যে ইহুদী ধর্ম এসেছে মাত্র প্রায় ২৬০০ বছর আগে, ইসলাম এসেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। অথচ আমাদের শেষ বরফ যুগ শেষ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে। তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর আগে কি মানুষের ধর্ম ছিল না? তাঁদের কি ঈশ্বরের ভয় ছিল না, মৃত্যুর ভয় ছিল না। সবই ছিল। সেই সব ধর্ম ছিল লোকজ ধর্ম। তারা পুঁজো করতো সূর্য, বাতাস, সাগর, পাহাড়, অতিকায় প্রাণী এই সবের। তাঁদেরও গোষ্ঠী নেতা ছিলা, সবই ছিল। এ কারণে হঠাৎ করে কিছু মানুষের দাবী করা যে তাদের ধর্মই সত্য, বাকী সবাই মিথ্যে, সেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর আমার যুক্তিতে। আমার মতে শুধুমাত্র মানুব সভ্যতার নৃ-তাত্বিক ইতিহাসই সক্ষম প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের দাবীকে অসাড় প্রমান করার জন্য।

তারপরেও ধর্মকে বাতিল করে দেওয়াটা এত সহজ নয়। সেখানে বিশ্বাস আছে, সেখানে নানান কু-যুক্তি রয়েছে। বিশ্বাসকে সত্যের মর্যাদা দেওয়ার জন্য আমাদের মনে নানান ধারণা নানান সময়ে পেয়ে এসেছি পরিবার হতে, সমাজ হতে, রাষ্ট্র হতে। সবচেয়ে আধুনিক ধর্ম হচ্ছে ইসলাম এবং নিজেও জন্মগত ভাবে ইসলাম ধর্মই পেয়ে এসেছি। ইসলামের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং বিশ্বাস - কোরান হচ্ছে আল্লাহর বাণী। যদি শুধুমাত্র প্রমান করা যায় যে কোরান আল্লাহর বাণী নয় এটি কোন মানুষের রচণা তাহলে ধর্মকে অস্বীকার করা অনেক সহজ হয়ে উঠে। এই বিষয়ে মুক্তমনায় পেলাম আকাশ মালিকের লেখা “যে সত্য বলা হয়নি”, বইটির মাধ্যমে ইসলামের অনেক ইতিহাসই জানতে পারি। অধিকাংশ মুসলমানদের মাঝে একটি বিশ্বাস যে মুহাম্মদ একজন নিরক্ষর ব্যক্তি এবং কোরানে যে সব বর্ণিত রয়েছে একজন নিরক্ষর মানুষের পক্ষে ১৪০০ শত বছর আগে সে গুলো বলা বা লেখা সম্ভব নয়। আবারো যদি শুধু মাত্র ইতিহাসই দেখি তবে দেখবো যে, মুহাম্মদ ছাড়াও তার আগে উনার মত আর কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন কিনা? যদি ইতিহাস পড়ি তবে দেখি মুহাম্মদ এর জন্মের প্রায় ১২০০ শত বছর আগে কনফুসিয়াস, জরাথ্রুষ্ট, গৌতম বুদ্ধ, সক্রেটিসের মত দার্শনিক, ধর্ম অবতারদের জন্ম। নীতির কথা তারাও বলে গিয়েছেন। সভ্যতার ইতিহাস যদি দেখি খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগে মিশরীয়রা মমি বানানোর পদ্ধতি বের করে। সেই সময় ব্যাবলীনিয় সভ্যতা, পারস্য সভ্যতাও অনেক উন্নতর ছিল। তাঁদের নিজস্ব সেঁচ ব্যবস্থা ছিল। এমনকি উপমহাদেশের সভ্যতার ইতিহাস দেখলেও দেখবেন যে মহাঞ্জোদারো, হরোপ্পা সভ্যতাগুলোও অনেক উন্নত ছিল। এই ইতিহাস বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে চৌদ্দশত বছর আগে নয়, প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বেও মানব সভ্যতা অনেক উন্নত ছিল। তাই চোদ্দশত বছর পূর্বের একজন মানুষের পক্ষে উন্নতর দর্শন রচণা অসম্ভব নয়।

বিশেষ করে ২৩০০ শত বছর আগে যদি গ্রীক সভ্যতার দিকে একটু তাকাই, তবে দেখি যে সেখানে থেলিস, ডেমোক্রিটাস এরিস্টটলের মত দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীরা গণিত, জীববিজ্ঞান, রাষ্টবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন। এরিষ্টটলের লেখা পলিটিক্স আজো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি অবশ্যপাঠ্য পুস্তক। সেই সময় এরিষ্টটল স্বৈরতন্ত্র, গণতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এই সব তন্ত্রের যে ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়েছেন সেগুলো আজো পরিবর্তন হয়নি। এরিষ্টটল জীববিজ্ঞানে যে অবদান রেখেছেন তার জন্য আমরা তাকে জীববিজ্ঞানের জনক বলি। একজন মানুষ যদি ২৩০০ বছর আগে রাজনীতি, জীববিজ্ঞানে এই পরিমান অবদান রাখতে পারেন তবে কেন ১৪০০ বছর আগের একজন মানুষ পারবেন না কোরানে বিজ্ঞানের মত বিষয়, রাষ্টনীতির মত বিষয় এবং নীতি কথার মত বিষয় নিয়ে লিখতে। মুহাম্মদ নিরক্ষর হতে পারেন, কিন্তু তিনি ২৫ বছর হতে ৪০ বছর পর্যন্ত ব্যবসার উদ্দেশ্য ভ্রমন করেছেন। তাই তিনি লিখতে না পারেন, কিন্তু তিনি একজন জ্ঞানী নন সেটা বলা যাবে না। উনি নিজে এই সব বিষয়ে চিন্তা করতেন, নিজের মনে কিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজতেন। এবং সেভাবে তিনি উনার নিজস্ব দর্শন খুজে পেয়েছেন, যা ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলাম ধর্ম নামে। এখন যদি কোরানের ভেতরে দেখি তবে দেখবেন কোরানে এমন কিছু নেই যা তখনকার মানুষ বা আগেরকার মানুষ জানতো না। মিশরীয় সভ্যতার কাহিনী বলি, বা নূহের বন্যার কাহিনীর বলি, লুত সভ্যতার কাহিনী বলি সবই আমাদের মুখে মুখে রচিত পূঁথিকাহিনীর মত আরবে ছড়িয়ে ছিল। আর সেগুলো ইহুদী এবং খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থেই লিপিবদ্ধ ছিল। কোরানে যে সব বৈজ্ঞানিক দাবী করে থাকে সেগুলো নুতন কিছু নয়, বরং কিছু ভুলও রয়েছে। সেই সময়কার জ্ঞানে ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক বরং না থাকাটাই মিরাকল হতো। তাই কোরান বা বাইবেল বা তাওরাত বা ইঞ্জিলকে আমি কোন ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলে মনে করি না। মনে করি না তাঁদের ঈশ্বরই পৃথিবীর সকল কিছুর স্রষ্টা।

বাকি থাকলো ঈশ্বর বলে কি কিছু আছে? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়ার মত অবস্থায় আমরা এখনো নেই। এর জবাব খুঁজার চেষ্টা চলছে মাত্র। তবে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক গবেষনায় ঈশ্বর অথবা আত্মার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যতক্ষন বৈজ্ঞানিক ভাবে কোন কিছু প্রমানিত না হচ্ছে ততক্ষন সেটার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান থাকবো। এই সেই দিন মাত্র স্টিফেন হকিং তার গ্রান্ড ডিজাইনে অবশেষে বলেছেন যে সৃষ্টিকর্তা ছাড়াও বিগ ব্যাং হওয়া সম্ভব। সুতরাং একদিন বিজ্ঞান সম্পুর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হবে বিশ্বের সৃষ্টি রহস্য। ধর্মকে বিবর্তনের দৃষ্টিতে দেখা সম্ভব। কিভাবে মানুষের মস্তিষ্কে বিশ্বাস নামক বস্তুটির সৃষ্টি হয় এবং সেটাকে কিভাবে এবং কেন আমরা ছড়িয়ে দেই প্রজন্ম হতে প্রজন্মে সেটা আমাদের বুঝতে হবে। কেন মানুষ সামাজিক জীব, কেন মানুষ গ্রুপে চলাচলে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে, কিভাবে গ্রুপ তাকে টিকে থাকতে সাহায্য করে এই বিষয়গুলো আমাদের বুঝতে হবে যদি আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের চরিত্র বুঝতে চাই। ধর্মকে মানুষই রক্ষা করে। ধর্ম বলে আলাদা কিছু নেই- এটা সংঘবদ্ধ একদল মানুষের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। একদল মানুষ সেটাকে লালন করছে। কিন্তু কেন তারা লালল করছে সেটাকে বুঝতে হবে যদি তাঁদেরকে সেই চিন্তা থেকে সরিয়ে আনতে চান। সেটা না বুঝে তাঁদেরকে জোর করে আপনি/আমি সেই বিশ্বাস হতে মুক্ত করতে পারবো না। এই মানুষগুলোর যদি সেই বিশ্বাসের প্রয়োজন না থাকে তবে সেটাকে লালনেরও প্রয়োজ়ন থাকতো না।

যদি আজ বিশ্বের সকল মানুষ ইশ্বরে অবিশ্বাসী হয়েও যায় তাতে কি শোষণ বন্ধ হবে? তাতে কি অন্যায় বন্ধ হয়ে যাবে, মানব হত্যা বন্ধ হয়ে যাবে? যাবে না। কারণ ধর্মই দ্বন্দ্বের মূলে নয়। টিকে থাকার সংগ্রাম দ্বন্দ্বের মূলে। যতদিন চাহিদা এবং সম্পদের মাঝে ব্যবধান থাকবে ততদিন দ্বন্দ্ব থাকবে। ধর্ম একদলকে এই টিকে থাকায় বাড়তি সহায়তা করেছে, তাই তারা ধর্মকে লালন করছে। জাতীয়তাবাদ নামক সংঘবদ্ধতা এই টিকে থাকায় সাহায্য করেছে তাই নানান জাতি গোষ্ঠী দেখি। এ কারণে আজ দেখি বিশ্বে বিশ্বাসীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। নদী এবং সাগরের পানির উচ্চতা যখন সমান হয়ে যাবে তখন পানির আর কোন প্রবাহ হবে না। তেমনি চাহিদা এবং উৎপাদনের বিভেদ যেদিন থাকবে না, দ্বন্দ্বও সেদিন থাকবে না। সমস্যা হল সেই বিভেদ পুরোপুরি কমানো অসম্ভব। এমন কোন সাধারণ গাণিতিক মডেল নেই যেটা দিয়ে বলতে পারবেন যে এভাবে চলিলে বিভেদ থাকবে না। এর পেছনে বড় বাঁধা হচ্ছে মানুষের চরিত্রের বিবর্তনীয় ক্ষমতা। পুরো ব্যবস্থাটি নির্ভর করছে আরেকজন মানুষ কিভাবে স্টেপ নেয় তার উপর। একজন মানুষের নেওয়া একশ্যানের উপর নির্ভর করে অন্যজনের কাজ, এভাবে হাজার কোটি মানুষের চরিত্রকে ডিটারমিনিস্টিক মডেলের আওয়তায় আনা এখনকার জ্ঞানে অসম্ভব। কিন্তু একেবারেই কি অসম্ভব? যদি আমরা মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে সেটা একদিন পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারি তবে হয়তোবা ক্ষুদ্র একটি সমাজে একটি নুতন আইন করা হলে তার ফলাফল কি হবে সেটা আমরা কম্পিউটারে বসেই বের করতে পারবো। তখন আফ্রিকা বা এশিয়ার কোন দেশে কোন অর্থনীতির মডেল হাতে নিলে, স্বল্প সম্পদ ব্যবহার করে , কিভাবে পুরো বিশ্বের জীবন ধারায় উন্নতি আনবে দিয়ে সেটা মডেল করে জানতে পারি। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াকে চলমান রাখাই আমাদের কর্তব্য । কম্পিউটার একদিনে আবিষ্কার হয়ে যায়নি। আমেরিকার আদম শুমারীতে ব্যবহৃত হতো এমন একটি সাধারণ গণনা যন্ত্র হতে ধীরে ধীরে কম্পিউটার আসে। এভাবে স্টীম ইঞ্জিন কিংবা এরোপ্লেন বা নিউটনের সুত্র কোন কিছুই হঠাৎ করে আবিষ্কৃত হয়নি। প্রতিটি গবেষণাতেই দেখা যায় পূর্বের গবেষণাকে উন্নত রুপ দিয়েই নুতন সুত্র আসে। থেলিস, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিষ্টটল, কনফুসিয়াস, বৌদ্ধ, যিশু, মুহাম্মদ, হাইপেশিয়া, কোপার্নিকাস, ভলতেয়ার, গ্যালিলিও, রুশো, হেগেল, মার্ক্স, লিবনিজ, নিউটন, শেক্সপিয়ার, ডারউইন, আইন্সটাইন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, হকিং, ডকিন্স এরা কেউ হঠাৎ করেই কিছু আবিষ্কার করে ফেলেননি। সভ্যতার ক্রমবিকাশের পথেই তাঁদের আগমন। সভ্যতা এভাবেই এগিয়ে যাবে। এই মুক্তমনা হতেই হতেই অভিজিত, বন্যা, আকাশ মালিকরা মানব সভ্যতায় নুতন কিছু দিয়ে যাবে। মানব সভ্যতা গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে যাবে। জয় হোক মুক্তমনার।


Wednesday, September 15, 2010

এলোমেলো চিন্তাঃ গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের আচরণ

মানুষ আসলে একটি গ্রুপের মাঝে থাকতে পছন্দ করে। এই যেমন মুক্তমনা বা সচল বা সামহোয়ারইন সবাই একটি গ্রুপ। আরো বড় গ্রুপ যদি চিন্তা করেন তবে ধর্মীয় গ্রুপ গুলো, কিংবা একেকটি জাতি বা রাষ্ট্রকে চিন্তা করতে পারেন। ছোট হোক বা বড় হোক যে গ্রুপে আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন সেই গ্রুপে আপনি চলতে পছন্দ করেন। গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের প্রয়োজন গ্রুপ বড় করার আবার আপনার নিজেরও প্রয়োজন কোন না কোন গ্রুপে থাকার। এভাবে দু’য়ের প্রয়োজনে আপনি আপনার গ্রুপ খুঁজে পান আবার গ্রুপও আপনাকে খুঁজে পায়। গ্রুপের চেষ্টা থাকে নানান সুবিধে দিয়ে তার গ্রুপকে সুসংহত রাখার। অন্য গ্রুপের আক্রমন হতে গ্রুপ আপনাকে রক্ষা করে। নিজের নানান বিপদে গ্রুপের সদস্যদের আপনি পাশে পাবেন যেটা আপনি পেতেন না যদি আপনি এই গ্রুপের সদস্য না হতেন। তাই কোন না কোন গ্রুপে আপনি সচেতনে কিংবা অবচেতনে যুক্ত থাকেন। এর মাঝে অনেক গ্রুপ হয়তো আসলেই সাংগঠনিক ভাবে বিদ্যমান আবার অনেক গ্রুপ শুধু মাত্র আদর্শে বিদ্যমান। যেমন আপনি হয়তো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। পৃথিবীর যে কোন গণতন্ত্রাকামি মানুষের প্রতি আপনার সহানুভুতি থাকবে। আবার গ্রুপের সদস্যদের মাঝে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে গ্রুপ নানান নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। গ্রুপ সব সময় নিজের ভাঙ্গন রোধে সচেষ্ট থাকে। তাই অনেক সময় কেউ গ্রুপ হতে বের হয়ে চলে যেতে চাইলে সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। গ্রুপের মাঝে কেউ নিয়ম না মানলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয় গ্রুপকে রক্ষার্থে। এই সবই চিন্তা করা যেতে পারে “এজ এ সেলফিশনেস অফ এ গ্রুপ” হিসেবে।

ছোট হোক বড় হোক যে কোন গ্রুপের মাঝে আমরা এই কমন বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাবো। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন সত্য মুক্তমনা বা সচলের মত ছোট গ্রুপের জন্য তেমনি সত্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় সংগঠনগুলোর জন্য। এ কারণেই অনেক মানুষ ধর্ম তেমন ভাবে পালন না করলেও শুধু মাত্র তার নিজের বা পরিবারের জন্য গ্রুপে রয়ে যায়। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ধর্ম পালন না করলেও, এমন কি ধর্মে অবিশ্বাস করলেও শুধু মাত্র সামাজিকতা রক্ষার্থে হয়তো জুম্মার নামাজটি, কিংবা ঈদের নামাজটি করেন, কিংবা রোজার মাসে রোজাও রাখেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, জুম্মার নামাজ পড়া বা রোজা রাখা কি ধর্ম পালন নয়? আমার জবাব হচ্ছে হিন্দুদের অনেকে উপোস করে থাকে, সেটা কি রোজা? না, তেমনি এক ওয়াক্ত নামাজ পালন, কিংবা সারা মাস উপোস করাটা ধর্ম পালন নয়। ধর্মে যদি তার বিশ্বাস থাকতো, তার যদি আল্লাহ্‌র ভয় থাকতো তবে তিনি পাঁচ ওয়াক্তই নামাজ পড়তেন। কারণ ইসলামে এক ওয়াক্ত নামাজও না পড়ার জন্য কোন অজুহাত রাখা হয়নি। এবার আপনি আপনার আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন শতকরা কতভাগ মানুষ পান, যারা সত্যিকার ভাবে আসলে ধর্ম পালন করে, বা ধর্মকে ধারণ করেন।

আবার যারা সত্যিকার ভাবে ধর্ম পালন করেন তার মাঝে বেশিরভাগই নিরীহ, সাধারণ মানুষ, যারা মূলত পরকালের ভয় থেকেই পুরোপুরি ধর্ম পালন করেন। এদের মধ্য খুব কম মানুষই কোরনের অনুবাদ পড়েছেন। কোরান সম্পর্কে জানেন এক মাত্র হুজুরদের বয়ান থেকে। আর যে সব হুজুরেরা বয়ান করেন তাঁদেরও বেশিরভাগই কম পড়ুয়া। খুতবার জন্য যতটুকু না জানলেই নয়, তাই জানেন। একই খুতবা আমার সারাজীবনে বার বার শুনে এসেছি জুম্মার বা ঈদের নামাজে। তাহলে প্রকৃত জিহাদী চেতনার মানুষ কিছু হিজবুত তাহরীর মত উগ্র সংগঠন থেকেই পাই, যারা মানুষের ধর্মভীরুতার, অজ্ঞতার, দারিদ্রতার সূযোগ নিয়ে ব্যবহার করে।

এখন কথা হল যে আমাদের শত্রু সকল ধার্মিক নয়। শত্রু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, এবং আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে ধর্মের মাঝে বিদ্যমান ক্ষতিকর এলিমেন্টগুলো, এবং আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে সেই সব এলিমেন্ট ব্যবহার করে যে সমস্ত ব্যক্তি তারা। আমি দেশে ফোন করার জন্য একবার একটি টেলিকমের লাইন নিয়েছিলাম, এবং সে জন্য আমাকে ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিতে হয়েছিল ফোনে। যে লোকটি নিয়েছিল তারা ব্যবহার কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। আমি ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে ফোন করে বললাম ঘটনা। সে যেটা বললো, এ রকম ফোনে অনেক লেনদেন হয়, সো ডোন্ট ওওরি। আমি জিজ্ঞেস করলাম ওই ব্যক্তি যদি আমার কার্ড ব্যবহার করে নিজে কিছু অনলাইনে কিনে, তাহলে? সে আমাকে যেটা বললো যে, আমার সেই প্রটেকশান আছে। যদি ওরা দেখে যে সেই জিনিসটি আমার নামে বা আমার ঠিকানায় যায় নি, তবে বুঝবে এটা আমি কিনিনি এবং সে ক্ষেত্রে টাকা আমাকে দিতে হবে না। আর তার চেয়েও যেটা বললো যে এটা করবে সেটা তার জন্য একটি ক্রিমিনাল এক্ট হবে। ক্রেডিট কার্ডের মালিক যেহেতু সে নয়, তাই সে সেটা ব্যবহার করলে আইনত সে অপরাধী। এই ঘটনাটি বলার উদ্দেশ্য হল যে সব ব্যক্তি সাধারণ মানুষের ধর্মভীরুতার, দারিদ্রতার সূযোগ নিচ্ছে সেই প্রকৃত অপরাধী। আমি এই কথাটি বারবার বলার চেষ্টা করি, যে কে প্রকৃত শত্রু সেটা আগে জানুন, তার পর না আপনি যুদ্ধে নামবেন।

এখন এই অপরাধী যেন তেন অপরাধী নয়। এই অপরাধী অনেক চালাক, কারণ তার অস্ত্র সেটাই যেটা মানুষের প্রয়োজন। এর সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সেই মানুষগুলো যাঁদের সে ব্যবহার করে। কিন্তু সেই মানুষগুলো কেন এ রকম ব্যবহৃত হচ্ছে? হচ্ছে কারণ এত বড় গ্রুপের শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মত ক্ষমতা তার নেই। এ রকম একটি বড় গ্রুপের বিরুদ্ধে তাকে লড়তে দিতে হলে তাঁর প্রয়োজন অন্য একটি কাছাকাছি শক্তির গ্রুপের অবস্থান যেখানে সে তার প্রয়োজনীয় শক্তিটুকু পাবে। যদি তাঁকে সেই গ্রুপটি না দিতে পারেন তবে তার কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করা ভুল। আর যদি তাকেই অপরাধী বানিয়ে বসে থাকেন তবে আপনি নিজেও বড় ভুল করলেন। ভুল শত্রুর পেছনে নিজের শক্তি খরচ করলেন। শত্রুর স্থলে নিজের ট্যাকনিকাল মিত্রকে নিজের শত্রু বানিয়ে দিলেন।

তাই আমার মতে একটি মুক্তমনা সমাজ দেখতে হলে মুক্তমনা গ্রুপকে বড় করতে হবে। মানুষের কাছে গ্রুপের আদর্শকে তুলে ধরে গ্রুপকে সব সময় বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। এবং এই গ্রুপে অন্য যে কারোর বিরুদ্ধেই বিদ্বেষ পূর্ণ কথার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকতে হবে গ্রুপের ভালোর জন্য। প্রায় এ রকম কথাই বিপ্লব’দা বলেছিলেনঃ বিজ্ঞান ভিক্তিক জনসংগঠনের কথা। জীবনটাই একটা যুদ্ধ, বেঁচে থাকার প্রচেষ্টাই একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আগে তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে হবে। উদ্দেশ্যহীন ভাবে তীর ছোড়াছুড়ি করলে শুধু সময় আর শক্তির অপচয় হবে। আর সেই অপচয় নিশ্চয়ই আমাদেরকে টিকে থাকতে কোন প্রকার সাহয্য করবে না। তাই যারা নিজেদের মুক্তমনা মনে করেন, নিজেদের মাঝে যুদ্ধ না করে, চলুন লক্ষ্য ঠিক করি, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করি। এই সংগঠনটিকেই বড় করি। মানুষের কাছে এর আদর্শ তুলে ধরি।