মানুষ আসলে একটি গ্রুপের মাঝে থাকতে পছন্দ করে। এই যেমন মুক্তমনা বা সচল বা সামহোয়ারইন সবাই একটি গ্রুপ। আরো বড় গ্রুপ যদি চিন্তা করেন তবে ধর্মীয় গ্রুপ গুলো, কিংবা একেকটি জাতি বা রাষ্ট্রকে চিন্তা করতে পারেন। ছোট হোক বা বড় হোক যে গ্রুপে আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন সেই গ্রুপে আপনি চলতে পছন্দ করেন। গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের প্রয়োজন গ্রুপ বড় করার আবার আপনার নিজেরও প্রয়োজন কোন না কোন গ্রুপে থাকার। এভাবে দু’য়ের প্রয়োজনে আপনি আপনার গ্রুপ খুঁজে পান আবার গ্রুপও আপনাকে খুঁজে পায়। গ্রুপের চেষ্টা থাকে নানান সুবিধে দিয়ে তার গ্রুপকে সুসংহত রাখার। অন্য গ্রুপের আক্রমন হতে গ্রুপ আপনাকে রক্ষা করে। নিজের নানান বিপদে গ্রুপের সদস্যদের আপনি পাশে পাবেন যেটা আপনি পেতেন না যদি আপনি এই গ্রুপের সদস্য না হতেন। তাই কোন না কোন গ্রুপে আপনি সচেতনে কিংবা অবচেতনে যুক্ত থাকেন। এর মাঝে অনেক গ্রুপ হয়তো আসলেই সাংগঠনিক ভাবে বিদ্যমান আবার অনেক গ্রুপ শুধু মাত্র আদর্শে বিদ্যমান। যেমন আপনি হয়তো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। পৃথিবীর যে কোন গণতন্ত্রাকামি মানুষের প্রতি আপনার সহানুভুতি থাকবে। আবার গ্রুপের সদস্যদের মাঝে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে গ্রুপ নানান নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। গ্রুপ সব সময় নিজের ভাঙ্গন রোধে সচেষ্ট থাকে। তাই অনেক সময় কেউ গ্রুপ হতে বের হয়ে চলে যেতে চাইলে সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। গ্রুপের মাঝে কেউ নিয়ম না মানলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয় গ্রুপকে রক্ষার্থে। এই সবই চিন্তা করা যেতে পারে “এজ এ সেলফিশনেস অফ এ গ্রুপ” হিসেবে।
ছোট হোক বড় হোক যে কোন গ্রুপের মাঝে আমরা এই কমন বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাবো। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন সত্য মুক্তমনা বা সচলের মত ছোট গ্রুপের জন্য তেমনি সত্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় সংগঠনগুলোর জন্য। এ কারণেই অনেক মানুষ ধর্ম তেমন ভাবে পালন না করলেও শুধু মাত্র তার নিজের বা পরিবারের জন্য গ্রুপে রয়ে যায়। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ধর্ম পালন না করলেও, এমন কি ধর্মে অবিশ্বাস করলেও শুধু মাত্র সামাজিকতা রক্ষার্থে হয়তো জুম্মার নামাজটি, কিংবা ঈদের নামাজটি করেন, কিংবা রোজার মাসে রোজাও রাখেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, জুম্মার নামাজ পড়া বা রোজা রাখা কি ধর্ম পালন নয়? আমার জবাব হচ্ছে হিন্দুদের অনেকে উপোস করে থাকে, সেটা কি রোজা? না, তেমনি এক ওয়াক্ত নামাজ পালন, কিংবা সারা মাস উপোস করাটা ধর্ম পালন নয়। ধর্মে যদি তার বিশ্বাস থাকতো, তার যদি আল্লাহ্র ভয় থাকতো তবে তিনি পাঁচ ওয়াক্তই নামাজ পড়তেন। কারণ ইসলামে এক ওয়াক্ত নামাজও না পড়ার জন্য কোন অজুহাত রাখা হয়নি। এবার আপনি আপনার আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন শতকরা কতভাগ মানুষ পান, যারা সত্যিকার ভাবে আসলে ধর্ম পালন করে, বা ধর্মকে ধারণ করেন।
আবার যারা সত্যিকার ভাবে ধর্ম পালন করেন তার মাঝে বেশিরভাগই নিরীহ, সাধারণ মানুষ, যারা মূলত পরকালের ভয় থেকেই পুরোপুরি ধর্ম পালন করেন। এদের মধ্য খুব কম মানুষই কোরনের অনুবাদ পড়েছেন। কোরান সম্পর্কে জানেন এক মাত্র হুজুরদের বয়ান থেকে। আর যে সব হুজুরেরা বয়ান করেন তাঁদেরও বেশিরভাগই কম পড়ুয়া। খুতবার জন্য যতটুকু না জানলেই নয়, তাই জানেন। একই খুতবা আমার সারাজীবনে বার বার শুনে এসেছি জুম্মার বা ঈদের নামাজে। তাহলে প্রকৃত জিহাদী চেতনার মানুষ কিছু হিজবুত তাহরীর মত উগ্র সংগঠন থেকেই পাই, যারা মানুষের ধর্মভীরুতার, অজ্ঞতার, দারিদ্রতার সূযোগ নিয়ে ব্যবহার করে।
এখন কথা হল যে আমাদের শত্রু সকল ধার্মিক নয়। শত্রু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, এবং আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে ধর্মের মাঝে বিদ্যমান ক্ষতিকর এলিমেন্টগুলো, এবং আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে সেই সব এলিমেন্ট ব্যবহার করে যে সমস্ত ব্যক্তি তারা। আমি দেশে ফোন করার জন্য একবার একটি টেলিকমের লাইন নিয়েছিলাম, এবং সে জন্য আমাকে ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিতে হয়েছিল ফোনে। যে লোকটি নিয়েছিল তারা ব্যবহার কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। আমি ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে ফোন করে বললাম ঘটনা। সে যেটা বললো, এ রকম ফোনে অনেক লেনদেন হয়, সো ডোন্ট ওওরি। আমি জিজ্ঞেস করলাম ওই ব্যক্তি যদি আমার কার্ড ব্যবহার করে নিজে কিছু অনলাইনে কিনে, তাহলে? সে আমাকে যেটা বললো যে, আমার সেই প্রটেকশান আছে। যদি ওরা দেখে যে সেই জিনিসটি আমার নামে বা আমার ঠিকানায় যায় নি, তবে বুঝবে এটা আমি কিনিনি এবং সে ক্ষেত্রে টাকা আমাকে দিতে হবে না। আর তার চেয়েও যেটা বললো যে এটা করবে সেটা তার জন্য একটি ক্রিমিনাল এক্ট হবে। ক্রেডিট কার্ডের মালিক যেহেতু সে নয়, তাই সে সেটা ব্যবহার করলে আইনত সে অপরাধী। এই ঘটনাটি বলার উদ্দেশ্য হল যে সব ব্যক্তি সাধারণ মানুষের ধর্মভীরুতার, দারিদ্রতার সূযোগ নিচ্ছে সেই প্রকৃত অপরাধী। আমি এই কথাটি বারবার বলার চেষ্টা করি, যে কে প্রকৃত শত্রু সেটা আগে জানুন, তার পর না আপনি যুদ্ধে নামবেন।
এখন এই অপরাধী যেন তেন অপরাধী নয়। এই অপরাধী অনেক চালাক, কারণ তার অস্ত্র সেটাই যেটা মানুষের প্রয়োজন। এর সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সেই মানুষগুলো যাঁদের সে ব্যবহার করে। কিন্তু সেই মানুষগুলো কেন এ রকম ব্যবহৃত হচ্ছে? হচ্ছে কারণ এত বড় গ্রুপের শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মত ক্ষমতা তার নেই। এ রকম একটি বড় গ্রুপের বিরুদ্ধে তাকে লড়তে দিতে হলে তাঁর প্রয়োজন অন্য একটি কাছাকাছি শক্তির গ্রুপের অবস্থান যেখানে সে তার প্রয়োজনীয় শক্তিটুকু পাবে। যদি তাঁকে সেই গ্রুপটি না দিতে পারেন তবে তার কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করা ভুল। আর যদি তাকেই অপরাধী বানিয়ে বসে থাকেন তবে আপনি নিজেও বড় ভুল করলেন। ভুল শত্রুর পেছনে নিজের শক্তি খরচ করলেন। শত্রুর স্থলে নিজের ট্যাকনিকাল মিত্রকে নিজের শত্রু বানিয়ে দিলেন।
তাই আমার মতে একটি মুক্তমনা সমাজ দেখতে হলে মুক্তমনা গ্রুপকে বড় করতে হবে। মানুষের কাছে গ্রুপের আদর্শকে তুলে ধরে গ্রুপকে সব সময় বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। এবং এই গ্রুপে অন্য যে কারোর বিরুদ্ধেই বিদ্বেষ পূর্ণ কথার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকতে হবে গ্রুপের ভালোর জন্য। প্রায় এ রকম কথাই বিপ্লব’দা বলেছিলেনঃ বিজ্ঞান ভিক্তিক জনসংগঠনের কথা। জীবনটাই একটা যুদ্ধ, বেঁচে থাকার প্রচেষ্টাই একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আগে তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে হবে। উদ্দেশ্যহীন ভাবে তীর ছোড়াছুড়ি করলে শুধু সময় আর শক্তির অপচয় হবে। আর সেই অপচয় নিশ্চয়ই আমাদেরকে টিকে থাকতে কোন প্রকার সাহয্য করবে না। তাই যারা নিজেদের মুক্তমনা মনে করেন, নিজেদের মাঝে যুদ্ধ না করে, চলুন লক্ষ্য ঠিক করি, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করি। এই সংগঠনটিকেই বড় করি। মানুষের কাছে এর আদর্শ তুলে ধরি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment