Monday, November 1, 2010

এলোমেলো চিন্তাঃ জীবনের উদ্দেশ্য এবং Inception

জীবনের উদ্দেশ্য কি? - এই প্রশ্ন মানুষের মনে প্রথম কবে আসে বলা মুশকিল। মানুষ যখন মূলত শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো তখন, নাকি যখন প্রথম কৃষিজীবি হয়ে উঠে তখন থেকেই এই প্রশ্নের উৎপত্তি। প্রশ্নের শুরু যখন থেকেই হোক সেই প্রশ্ন যে বংশপরম্পরায় আজো আমরাও বহন করে চলছি তার প্রমান পাই আজো সবার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজা দেখে। এই প্রশ্নের পেছনে কোন একক নির্দিষ্ট জাতি শুধু সময় ব্যয় করেনি- বলা যায় ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলেই কোন না কোন জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর সবচেয়ে সহজ যে জবাবটি আমরা দেখি তা হল দু’স্বত্বা, দু’জগত এবং এক বা বহু সৃষ্টিকর্তার চিন্তাতে। এই বিশ্বাস মূলত নির্ভর করছে দেহ এবং আত্মা এই দুটি বিষয়ের উপর। দেহের মৃত্যুর পর আত্মার অমরণশীলতা এবং সে সাথে নুতন একটি জগতে প্রবেশ করা, এই ধারণার উপর ভিক্তি করে এই জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।

সকলেই যে এই মতবাদে বিশ্বাসী তা নয়। তারা কোন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নয় বা মৃত্যুর পরের কোন জগতেও বিশ্বাসী নয়। তাছাড়া, আধুনিক বিজ্ঞানেও মন বা আত্মার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই। মানুষের মস্তিষ্কের ক্রিয়া/প্রতিক্রিয়ার মাঝেই মনের অবস্থান। মস্তিষ্কের মৃত্যুর মাঝে মনেরও মৃত্যু ঘটে। আত্মা যদি নাও থাকে সমস্যা রয়েই যায়, তা হলো এই জীবনের উদ্দেশ্য কি? কেনই বা এই পৃথিবী আর কেনই বা এত দ্বন্দ্ব।

এই কিছুদিন আগেও মানুষের কাছে এর জবাব ছিলনা। কিন্তু অধুনা জেনেটিক বিজ্ঞান, ণৃ-বিজ্ঞান, এবং জীববিজ্ঞানের ফলে মানুষ আজ তার নিজের বিবর্তন সম্পর্কে অতীতের চেয়েও অনেক বেশি জানে। জীববিজ্ঞানের শাখায় বিবর্তন আজ একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। এটি শুধু জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যেমন চিকিৎসাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, জেনেটিক্স এর মত শাখাগুলোতেও আজ প্রয়োগ হচ্ছে। AIDS ভাইরাস বা সুপারবাগ ব্যাক্টেরিয়ার মত প্রাণঘাতী জীবগুলোর প্রতিষেধক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিবর্তনের জ্ঞানকে কাজে লাগানো হচ্ছে। মানুষের আচার/ব্যবহার বিশ্লেষণের জন্য, মানুষের বিভিন্ন মানসিক রোগ অথবা অটিজমের মত রোগগুলোকে বিশ্লেষণের জন্য মনোবিদ্যায় বিবর্তনকে কাজ লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধ আচরনকে বোঝার জন্য কিংবা জাতিগত দ্বন্দ্ব নিরসনে, বা অর্থনীতির মত বিষয়গুলোকে বোঝার জন্যেও আজ বিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে বিবর্তনীয় সমাজবিজ্ঞান,বিবর্তনীয় অর্থনীতির মত বিষয়গুলোর চালু হয়েছে।

আজকের এই লেখায় বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার আলোকে জীবনের উদ্দেশ্য তুলে ধরার কিছুটা চেষ্টা করবো। বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা অনুসারে মানুষের মস্তিষ্ক তার অন্যান্য অঙ্গের মতই দীর্ঘ বিবর্তনের একটি ফসল। অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আমরা এগিয়ে গিয়েছি আমাদের এই বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মস্তিষ্কের জন্য। এ জন্য আমাদের মস্তিষ্কের আকার অন্যান্য প্রাণীদের থেকে বড়। বিবর্তনের উপর প্রাথমিক জ্ঞানের জন্য মুক্তমনা ও সচলের লেখক বন্যা আহমেদের বিবর্তনের পথ ধরে বইটি পড়তে পারেন। এটি বাংলা ভাষায় বিবর্তনের উপর লেখা একটি অসাধারণ বই। খুব সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য বইটি লেখা হয়েছে। আমার নিজের প্রাথমিক জ্ঞানও লাভ করি এই বই থেকে।

আমাদের দেহকে যদি একটি যন্ত্র হিসেবে চিন্তা করেন এবং তাহলে মস্তিষ্ককে চিন্তা করতে পারেন একটি গণনা কেন্দ্র হিসেবে যেটি বিশ্বের আধুনিকতম কম্পিউটারের চেয়েও শক্তিশালী। শুধু এর ভেতর তারের জালের পরিবর্তে রয়েছে অসংখ্য সুক্ষ্ণ নার্ভ। মানুষকে চিন্তা করতে পারেন একটি রোবট হিসেবে, শু্ধু এর পার্টসগুলো তৈরী হচ্ছে মাংস দিয়ে। মস্তিষ্ক হচ্ছে আমাদের দেহের প্রসেসিং ইউনিট। যে কোন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য চলে যায় মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক সেটি প্রসেস করে, তার পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে করণীয় নির্ধারণ করে সেটা পাঠিয়ে দেয় যথাযথ প্রত্যঙ্গের কাছে।

মস্তিষ্ক আবার একই সাথে একটি প্রসেসিং যন্ত্র এবং তথ্য সংরক্ষনের স্থান। আমাদের যাবতীয় তথ্য এখানে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু মস্তিষ্কের আকার যেহেতু সীমাবদ্ধ তাই সকল তথ্যই আমাদের পক্ষে ধারণ করা সম্ভব হয় না। কোন তথ্য সংরক্ষন করা হবে তার জন্য মস্তিষ্ক পূর্ব অভিজ্ঞতা, কতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, তথ্যের প্রয়োজনীয়তা এসবের উপর ভিক্তি করে একটি রেটিং করে এবং সেভাবে সে সংগ্রহ করে। এ জন্য দেখা যায় যে অনেক কিছুই আমরা দেখি/শুনি/পড়ি কিন্তু সকল তথ্য আমাদের স্মরণ থাকে না। আবার সকল তথ্য একই গভীরতায় সংরক্ষিত হয় না। যে সব তথ্য আমরা দৈনন্দিন ব্যবহার করি সেগুলো প্রথম ধাপেই রাখা হয় যেন সহজেই চাইলে পাওয়া যায়। আর যেগুলো সচারচর ব্যবহার করা হয়না সেগুলো একটু গভীরে রাখা হয়। অনেকটা একটি দোকানের জিনিস সংরক্ষনের মত। চালু আইটেমগুলোকে হাতের নাগালেই রাখা হয়, আর একটু কম চালু বা দামী জিনিসগুলোকে গোডাউনে অথবা বিশেষ স্থানে রাখা হয়।

মানুষের নানান আচার/ব্যবহার মস্তিষ্কের গঠন/গড়ন এবং এর কার্যপদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত করা সম্ভব। অবশ্য এই বিষয়গুলো এখনো নুতন, প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে এই বিষয়ের উপর। বিশেষ করে মস্তিষ্কের স্ক্যানিং প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হবার পর বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছে মস্তিষ্কের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে আরো বিষদভাবে জানার জন্য। আশা করা যায় একদিন মানুষ সেই লক্ষ্যে পৌছতে পারবে। তখন হয়তো মানুষের কছাকাছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরী করা সক্ষম হবে। মস্তিষ্কের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বেশি জানার জন্য Evolutionary psychology বা শুধু psychology এর উপর যে কোন বই দেখতে পারেন আগ্রহী পাঠকগণ।

আমি এবার একটু লম্ফ দিব আরেকটি বইয়ের গল্পে। এই বইটির লেখক ডেনিয়েল ডেনেট, তিনি বর্তমান কালের একজন দার্শনিক। তিনি Tufts University এর একজন অধ্যাপক। কাজ করেন মূলত মনোবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, দর্শন নিয়ে। সম্প্রতি তার একটি বই পড়লাম- ব্রেকিং দ্যা স্পেলঃ রিলিজিয়ন এজ এ ন্যাচারাল ফেনেমেনন। তিনি বইটিতে মূলত দেখাতে চেষ্টা করেছেন কিভাবে আমাদের মস্তিষ্কের মাঝে বিদ্যমান কোন আইডিয়া/ধারণা আমাদেরকে চালিত করে। এই আইডিয়া মস্তিষ্কের মাঝে অবচেতন ভাবে আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। যদি আইডিয়াই একজন মানুষের চালিকা শক্তি হয়ে যায় তবে সেটা অনেকটা ভাইরাসের মত প্রাণঘাতী হতে পারে। যেমনটি হয়ে থাকে Lancet liver fluke নামক পরজীবিতে আক্রান্ত পিঁপড়ে। এই পরজীবিটি তার জৈবিক চক্রের একটি ধাপে গিয়ে শামুকের লালা হতে চলে যায় পিঁপড়ের পাকস্থলীতে। তারপর সেখানে বংশ বৃদ্ধি করে এক পর্যায়ে পিঁপড়ের নার্ভ এর দখল নিয়ে ফেলে। পরজীবিটিকে তার বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে কোন গবাদীপশুর পাকস্থলীতে। এই অবস্থায় পরজীবিটি পিঁপড়েটিকে বাধ্য করে কোন লম্বা ঘাসের চুঁড়ায় উঠার জন্য। পিপড়েটি ঘাসের আগায় উঠে বসে থাকে যতক্ষন না সে কোন গবাদীপশুর পেটে যায়। এভাবেই চলতে থাকে। পিঁপড়েটি নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে কোন প্রতিরোধ করতে পারে না। কথা হল পিঁপড়েটিকে কিভাবে চালিত করে সেই পরজীবিটি। পিঁপড়েটিকে একধরণের সুখানুভুতি প্রদান করে পরজীবিটি যদি সে সেই লম্বা ঘাসের চূড়ায় উঠে। সেই অনুভূতির লোভে পিঁপড়েটি এই কাজে বারংবার প্ররোচিত হয়।

এই বিষয়টিকেই আরেক বিবর্তনীয় বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তার সেলফিশ জিন বইয়ে বলেছেন সেলফিশনেস অফ জিন। জিন তার নিজের বংশবৃদ্ধিতে তার হোস্টকে মরে যেতেও উদ্ধুদ্ধ করে। যে কারণেই প্রাণী জগতের মাঝে পরোপোকারীর মত ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। সে কারণেই একজন মা/বাবা তাঁদের নিজের জীবন দিয়ে হলেও নিজের সন্তানকে রক্ষা করে। এই বিষয়গুলোই প্রকাশ করে জিনের স্বার্থপরতার বিষয়টি। সুতরাং বিবর্তনীয় দৃষ্টিতে যদি দেখি তবে আমাদের জীবনের আসলে উদ্দেশ্য একটিই, তা হচ্ছে নিজের জিনকে রক্ষা করা এবং এর বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। প্রচন্ড হতাশার, কি বলেন?


তবে এটা হচ্ছে ম্যাক্রো লক্ষ্য। একজন ইন্ডিভিজুয়ালের কাছে সেই চালিকা শক্তি থাকে না। তাহলে জিন কিভাবে তার নিজের উদ্দেশ্যে পৌঁছে, সেটা একটি প্রশ্ন। এখানেই আসে আমাদের মস্তিষ্কের কাজ। যেহেতু মস্তিষ্ক হচ্ছে আমাদের মূল প্রসেসিং ইউনিট তাই আমাদের অবচেতন মন সেই লক্ষ্যে সেট করা রয়েছে। অন্যভাবে, সেই পিঁপড়েটির সাথে তুলনা করলে দেখবেন যে আমাদের মস্তিষ্কের এই অবচেতন অংশের কাজ হচ্ছে আমাদেরকে সেই সুখানুভুতি প্রদানের মাধ্যমে তার নিজের লক্ষ্য কাজ করা। এখন একজন মা/বাবা নিজের মৃত্যু হলেও যদি জানেন যে তার সন্তান রক্ষা পেয়েছে বা পাবে তিনি কোন কষ্ট অনুভব করেন না। আবার ধরুণ, সেক্স এর মাধ্যমে এক ধরণের সুখানুভুতি লাভ হবে, যার তাড়নায় আপনি সে কর্মে নিমজ্জিত হবেন আর জিন তার বংশবৃদ্ধি করবে। অবশ্য পরিবার পরিকল্পনার কথা জিন ভাবেনি। আপনি/আমি লেখালেখি করে আনন্দ পাই, কেউ আড্ডা মেরে আনন্দ পাই, কিংবা ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ হই, সবই আমাদের মস্তিষ্কের সেই ভাল লাগাকে ম্যাক্সিমাইজ করার জন্য। দিন শেষে একটি কাজ করে যদি দেখেন যে আপনি আসলে কোন সুখ পাচ্ছেন না, তখন পুরো সময়টাই অপচয় হয়েছে বলে ভাবি। তাহলে মাইক্রো লেভেল জীবনের উদ্দেশ্য ধরতে পারি এই ভাল লাগার অনুভুতিকে ম্যক্সিমাইজ করা। জীবনের প্রতিটি মুহুর্তেই আমরা সব সময় হিসেব করতে থাকি সচেতনে বা অবচেতনে কতটুকু ভাল লাগা বা মন্দ লাগা অর্জন করেছি। আর তার পরিপ্রেক্ষিতেই ভাবি জীবনটি কি অর্থহীন না অর্থহীন নয়। আমার কাছে তাই জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিটি মুহুর্তকে উপভোগের মাধ্যমে ভাল লাগার অনুভুতিকে ম্যক্সিমাইজ করা, খারাপ অনুভুতিকে মিনিমাইজ করা, এবং তার মাধ্যমে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার প্রেরণা লাভ করা।

এখন আসুন আরেকটু জটিল ভাবনায়। মস্তিষ্কের মাঝে এই অবচেতন অংশে আমি/আপনি যদি একটি ধারণা পাই যেটি ধারণাটির জন্য ভাল কিন্তু আমার বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর সে ক্ষেত্রে কি হবে? ধরুণ, জিহাদী ধারণা। এরকম একটি ধারণা আপনার নিজেকে উদ্বুদ্ধ করে আত্মহত্যার মত কাজে, আবার সেই সাথে এটি ক্ষতিকর সমাজের জন্য কারণ এতে অনেক নিরীহ মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। এবং এরকম একটি ধারণা কিন্তু সহজেই আপনার মাঝে প্রতিস্থাপিত হতে পারে আপনার চারিপাশ হতে, আপনার পরিবার হতে, বা আপনি নিজেও যে কোন ভাবে এই ধারণায় উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। এখানেই চলে আসে ইনসেপশান ছবিটির কথা। ছবিটিতে এই বিষয়টিই দেখানো হয়েছে যে কিভাবে একটি ক্ষুদ্র ধারণা আপনি অন্যজনের মাঝে প্রতিস্থাপন করতে পারেন। ছবিটির বানিজ্যকরণের লক্ষ্যে সেখানে নানান বিষয়, যেমন স্বপ্ন, স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন নিয়ে এসেছে, থ্রিল এসেছে। তবে মূল উদ্দেশ্য ছিল “একটি ক্ষুদ্র ধারণার প্রতিস্থাপন”, যেটা অন্য একজন মানুষের স্বপ্নের মাঝে করা হয়েছে এমন ভাবে যেন সেই ব্যক্তিটি বুঝতে না পারে যে তার মাঝে অন্য কেউ কোন ধারণা প্রতিস্থাপন করেছে।

এখন যদি আমরা আমাদের নিজস্ব জগতের কথা চিন্তা করি তবে এরকম ধারণার ইনসেপশান কিন্তু অহরহই হচ্ছে। এই যেমন আমার আজকের লেখা আপনার মাঝে একটি ক্ষুদ্র ধারণা প্রতিস্থাপিত করতে পারে। এভাবে অবচেতন মনে বিদ্যমান নানান ধারণা ছাড়াও শিশুকাল হতে এটা করা খারাপ/এটা করা যাবে না এরকম নানান ধারণার ইনসেপশান চলতেই থাকে, যেটা অনেক বড় হয়েও অনেকেই কাটাতে পারি না। আর সেই ধারণা যখন বদ্ধমূল হয়ে যায় সেটা পরিণত হয় একটি স্থির বিশ্বাসে এবং তখন বিশ্বাসই হয়ে যায় চালিকা শক্তি। তখন আরেকজনকে বিচার করি নিজের বিশ্বাসের আয়নায়, একজন মানুষ হিসেবে নয়। ডেনেট এই বিশ্বাস ব্যবস্থাকেই বলেছেন ভাইরাসের মত।

এ কারণে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা যে কোন বিশ্বাসকে সংরক্ষনের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দেই, আমরা দেশের জন্য প্রাণ দেই, আমরা মানবাধিকারের জন্য প্রাণ দেই, আমরা ধর্মের জন্য প্রাণ দেই। আমরা বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে বন্ধুর সাথে তর্কে লিপ্ত হই, বন্ধুত্ব ছিন্ন করি। আমরা সেই বিশ্বাসকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে আনন্দ পাই। কারণ বিশ্বাসই তখন চালিকা শক্তি। তাই সতর্ক থাকুন, নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে। অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আগে ভাবুন, আপনার ধারণাটি কি প্রাণঘাতী নাকি মানুষের কল্যাণমূখী। আপনার সন্তানের মাঝে কোন ধারণার ইনসেপশানের আগে একটি বার ভেবে, তারপর সিদ্ধান্ত নিন। কারণ একমাত্র কল্যাণমূখী ধারণাই দিতে পারে একটি সুন্দর ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং একটি সুন্দর পৃথিবী। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার চেষ্টাই, তাই, আমার লক্ষ্য।


কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

১। বিবর্তনের পথ ধরে লেখক বন্যা আহমেদ
২। Evolutionary psychology: an introduction by Lance Workman and Will Reader
৩। Breaking the spell: Religion as a natural phenomenon by Daniel Dennett
৪। The selfish gene by Richard Dawkins
৫। Inception (a movie released in 2010)
৬। Wikipedia

No comments:

Post a Comment